December 22, 2024, 8:19 pm
একটি দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন/
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমুহের তিনটি শীর্ষ পদ উপাচার্য, উপ-উপচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগে আরো বেশী সর্তকতার তাগিদ সরকারের অভ্যন্তরে। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব পদগুলোতে কাজ করা বেশ কিছু উপাচার্য, উপ-উপচার্য ও ট্রেজারারে বির্তকিত কাজকর্ম ও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়ম, দূর্নীতি সরকারকে বিব্রত করেছে। এ অবস্থায় সরকার এই পদগুলোতে নিয়োগের পূর্বে নানাভাবে যাচাই-বাছাই করতে চায়। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা রির্পোটকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। নিয়োগগুলোতে এখন গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের (সাবেক) প্রফেসর হারুন-উর-রশীদ আসকারী ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল হক কলিমুল্লাহর নানা কর্মকান্ড একটি পক্ষ কতৃক শ্বেতপত্র প্রকাশিত হলে সরকারের মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সরকার গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এ বিষয়ে অবগত হয়। নানা অনিয়মের প্রমাণও মেলে। সরকার তাই উপাচার্য, উপ-উপচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের পূবেই আরো বেশী সর্তকতার তাগিদ অনুভব করছে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার একজন সিনিয়র অধ্যাপককে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার আগে তার অতীত আমলনামা ও পারিবারিক তথ্য যাচাই-বাছাই করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চাকরিজীবনে তিনি কোন ধরনের চরিত্রের অধিকারী ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতি করতে গিয়ে কোন ধরনের ভূমিকা নিয়েছেন, বিরোধীদলীয় শিক্ষকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন কিনা— তদন্ত প্রতিবেদনে এসব বিষয় অগ্রাধিকার পাবে। প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তিনি কোনো আর্থিক অনিয়মে জড়িয়েছেন কিনা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া আগ্রহী অধ্যাপকের পুরো ক্যারিয়ারের একটি খন্ডচিত্র সেখানে থাকবে।
এদিকে বিষয়টি মাথায় রেখেই গত বছর ১২ আগস্ট দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ১০ শতাংশ অধ্যাপকের তালিকা চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে দেওয়া চিঠিতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতা অনুসারে ১০ শতাংশ অধ্যাপকের জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে বলা হয়। ইউজিসি ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ওই তালিকা থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে। সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য হওয়া উপাচার্য পদে আগ্রহীদের তথ্য সংগ্রহ করতে গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারস্থ হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব আকারে যাদের নাম পাঠাবে তার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও যুক্ত করে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ডিনকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেলে এক নম্বর করে প্রস্তাব পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফেরত আসে। তার সম্পর্কে আরও অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পুনরায় প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ওই শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাবশালী হলেও তিনি বিরোধী শিক্ষক রাজনীতি করেন এমন শিক্ষকদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্ন লেখায় প্লেজারিজম (চৌর্যবৃত্তি) করেছেন। এমন অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার পর তা ফেরত আসে। তার বিষয়ে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পুনরায় ফাইল তুলতে বলা হয়েছে।
এদিকে আসছে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের ১২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ শূন্য হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসি নিয়োগের জন্য এখনই প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বর্তমানে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ ফাঁকা। এগুলো হলো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মার্চ মাসে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ ফাঁকা হচ্ছে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানের মেয়াদ শেষ হবে ২০ মার্চ এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার পদ ফাঁকা হচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুস সোবহানের মেয়াদ শেষ হবে ৬ মে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার ১০ জুন, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের ১৯ মে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ১৩ জুন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের ১০ জুন। নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার হবিগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একাধিক জানিয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। অসংখ্য শিক্ষক যারা পূর্বে অন্যদলের বা আদর্শের সাথে জড়িত ছিল নানাভাবে রঙ পাল্টে বর্তমান সরকারের আদর্শের রাজনীতির মোড়ক গায়ে লাগিয়েও ফেলেছে। এরা নানা পদ পদবী পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থের আশ্রয়ও নিচ্ছে। এদের সাথে যোগ হয়েছে দলের মধ্যেরই ঘাপটি মেরে বসে থাকা এক শ্রেণীর হাইব্রিড চিন্তার শিক্ষরাও। এরাই অ¦াবার প্রকৃত আওয়ামী আদর্শের শিক্ষকদের চরিত্র হননে লিপ্ত তাদেরকে কোনঠাসা করে নিজেরা পদ পদবী ভাগিয়ে নিতে।
বিষয়গুলো নিয়ে সরকার তাই ভাবতে শুরু করেছে।
Leave a Reply